ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় কি কি
ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত কনটেন্ট লিখার চেষ্টা করব যা আপনাদের উপকারে আসবে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা একটি সাধারণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্ক সবার ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে যদি সময় মতো সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। চলুন জেনে নেই ডায়রিয়া হলে আমাদের কি কি করণীয়।
ডায়রিয়া একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা, তবে অবহেলা করলে তা মারাত্মক আকার নিতে
পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই ডায়রিয়া সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা
সম্ভব। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক থাকা
প্রয়োজন।আপনার সুস্থতাই আমাদের প্রাধান্য-ডায়রিয়া হলে ভয় নয়, সচেতনতা ও সঠিক
করণীয়ই হতে পারে আপনার পরিত্রাণ।
পেজ সূচিপত্রঃ ডায়রিয়ার মতো ভয়ানক রোগের বিভিন্ন প্রতিকার বিশ্লেষন
- ডায়রিয়া হলে করণীয় প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করুন
- হালকা সহজপাচ্য খাবার খান যেমনঃ খিচুড়ি, সিদ্ধ ভাত, আলু,কাঁচা কলা
- শরীরের শক্তি ও পুষ্টি ধরে রাখতে স্যালাইন ও ডাবের পানি একসঙ্গে চালিয়ে যান
- শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান,পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন
- সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে খাওয়ার আগে ও টয়লেটের ব্যবহারের পর
- নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন
- মুখে শুকনোভাব,প্রস্রাব কমে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া এসব লক্ষণ নজরে রাখুন
- ঘরে স্যালাইন তৈরি করতে পারেন ১ লিটার পানিতে ১ চা-চামচ লবণ ও ৮ চা-চামচ চিনি
- লেখকের শেষ কথা মন্তব্য ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় কি কি এই সম্পর্কে
ডায়রিয়া হলে করণীয় প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করুন
- ১ লিটার ঠান্ডা ফুটানো পানিতে একটি প্যাকেট মিশিয়ে নিন তৈরি করে নিন।
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০০-২৫০ মিলি করে ওরস্যালাইন পান করুন।
- শিশুর ক্ষেত্রে ৫০-১০০ মিলি করে দেওয়া উচিত।
- একবার তৈরি স্যালাইন ১২ ঘন্টার মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে।
আরো পড়ুনঃ জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার
- অতিরিক্ত ঘন বা পাতলা ওরস্যালাইন তৈরি করবেন না।
- অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
- ডায়রিয়ার সঙ্গে যদি জ্বর, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা বা দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হালকা সহজপাচ্য খাবার খান যেমনঃ খিচুড়ি, সিদ্ধ ভাত, আলু,কাঁচা কলা
- একটি হালকা ও সহজ সহজপাচ্য খাবার যা চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি হয়।
- এটি সহজে হজম হয় এবং পেটের উপরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।
- ডাল থেকে প্রোটিন ও চাল থেকে শক্তি পাওয়া যায়, যা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।
- পাতলা ভাত বা হালকা গরম ভাত ডায়রিয়ার সময় উপকারী।
- এটি সহজে হজম হয় এবং দেহের শক্তি যোগায়।
- ভাত থেকে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- ভাতের মাড় পান করলেও শরীরে পানি ও মিনারেল পূরণ হয়।
- আলুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট যা শক্তি যোগায়।
- এটি সহজে হজম হয়এবং পেটের ভিতরের স্তরকে শান্ত রাখে।
- আলুতে থাকা পটাশিয়াম ডায়রিয়ায় হারিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইট পূরণ করে।
- খাওয়ার সময় একটু লবণ দিয়ে খেলে আরো উপকার পাওয়া যায়।
- ডায়রিয়া কমাতে কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান।
- এতে থাকার ট্যানিন ও পেকটিন পেটের ঝিল্লিকে রক্ষা করে এবং পাতলা পায়খানা হওয়া রোধ করে।
- কলা সিদ্ধ করে খেতে হয়, যাতে হজম সহজ হয় এবং আঁশ জাতীয় উপাদান পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
- এটি শরীরের মিনারেল সরবরাহ করে এবং দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক।
শরীরের শক্তি ও পুষ্টি ধরে রাখতে স্যালাইন ও ডাবের পানি একসঙ্গে চালিয়ে যান
- ওরস্যালাইন শরীরে পানি ও ইলোকট্রোলাইট( যেমন সোডিয়াম পটাশিয়াম গ্লুকোজ) দ্রুত সরবরাহ করে
- এটি শরীরের পানি শূন্যতা রোধে সাহায্য করে
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১ গ্লাস করে খেলে শরীরের লবণের ঘাটতি পূরণ হয়
- স্যালাইন শরীরের রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং দুর্বলতা কমায়
- ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট দ্রবণ যা পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও মিনারেল সমৃদ্ধ
- এটি শরীরের দ্রুত শক্তি যোগায় ও পানি শূন্যতা দূর করে
- ডায়রিয়ায় খনিজ পদার্থ হারিয়ে গেলে ডাবের পানি তা প্রাকৃতিকভাবে পূরণ করে
- এটি পেট ঠান্ডা রাখে ও হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে
- ডাবের পানি ও স্যালাইন উভয়ই শরীরকে আলাদা আলাদা উপকার দেয়
- ডাবের পানির প্রাকৃতিক মিনারেল ও স্যালাইনের পরিমিত লবণ ও গ্লুকোজ মিলিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখে
- ডায়রিয়া চলাকালীন দিনে কয়েকবার ডাবের পানি এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়া শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে
- এতে করে এতে করে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও পানি শূন্যতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়
শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান,পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার বিশেষ করে ডায়রিয়ার সময়
- এই সময় শিশুকে অতিরিক্ত দুধ বা বাইরের দুধ অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো উচিত
- বুকের দুধে রয়েছে এন্টিবডি যার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
- পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করে
- সহজে হজম হয় এবং শিশুর পেটকে আরাম দেয়
- ডায়রিয়ার সময় শিশুর শরীরে যে পানির ঘাটতি হয় তা পূরণ করে
- বুকের দুধে ল্যাকটোফেরিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে যা ডায়রিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে
- প্রতিবার পায়খানার পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে যদিও সেটা আগের চেয়ে বেশি হতে পারে
- ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হলো ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী খাবার বা পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
- শিশুকে খাবার দেওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
- পায়খানা পরিষ্কার করার পর হাত ধুতে হবে
- শিশুর প্রস্রাব পায়খানা পরিবর্তনের পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে
- ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন
আরো পড়ুনঃ গ্যাষ্টিকের সমস্যা হলে আমাদের কি করা উচিত
- ডায়রিয়ার সময় জীবাণুর ঝুঁকি বেড়ে যায়
- পরিচ্ছন্ন টয়লেট রোগ প্রতিরোধ করে
- প্রতিবার ব্যবহারের পর ফ্ল্যাশ করা জরুরি
- জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন
- গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করুন পরিষ্কার করার সময়
- পরিষ্কারের পর হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক
- শিশু বা অসুস্থ ব্যক্তি আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন
- টয়লেটের আশপাশ শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন
- ব্লিচ বা ডিসিনফেকটেন্ট ব্যবহার করা
সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে খাওয়ার আগে ও টয়লেটের ব্যবহারের পর
- ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যার পর
- খাবার রান্না ও খাওয়ার আগে
- শিশুদের খাওয়ানোর আগে
- ডায়াপার পরিবর্তনের পর
- মুখ নাক বা চোখে হাত দেওয়ার আগে
- স্যালাইন বা ওষুধ তৈরীর আগে
- হাতকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন
- ভালোভাবে সাবান মাখান-আঙ্গুলের ফাঁক, নখের নিচে, হাতের পেছনেও
- অন্তত ২০ সেকেন্ড ঘষে ধুতে থাকুন
- পরিষ্কার পানি দিয়ে সাবান ধুয়ে ফেলুন
- পরিষ্কার তোয়ালে বা বাতাসের শুকিয়ে ফেলুন
- সম্ভব হলে অ্যালকোহল মুক্ত হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন
- তবে ময়লা বা চর্বিযুক্ত হাতে স্যানিটাইজ এর কার্যকর নাও হতে পারে, সে ক্ষেত্রে পানি ও সাবানই শ্রেষ্ঠ উপায়
- জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস হয়
- নিজের ও অন্যদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়
- পরিবার ও শিশুদের নিরাপদ রাখা যায়
- ডায়রিয়ার বিস্তার কমানো যায়
নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন
- ভুল ওষুধ খাওয়া-নিজে ওষুধ খেলে রোগের ধরন অনুযায়ী সঠিক নাও হতে পারে
- ডোজের ভুল- বেশী বা কম খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে
- অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক-প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক খেলে শরীরে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হয়
- আসল রূপ চিহ্নিত না হওয়া-ডায়রিয়ার পেছনে বড় কোন অসুখ (যেমন টাইফয়েড, আমাশয়,ফুড পয়জনিং)থাকতে পারে। নিজে ওষুধ খেলে তার ধরা নাও পড়তে পারে
- রোগের ধরন অনুযায়ী পরীক্ষার পর ওষুধ দেওয়া হয়
- ওষুধের সঠিক মাত্রা ও সময় নির্ধারণ করেন
- শিশু গর্ভবতী নারী বা বৃদ্ধদের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেন
- প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন
- অন্যান্য রূপ থাকলে সেটার দিকেও খেয়াল রাখেন
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করুন
- সহজ পাঠ্য খাবার খান সিদ্ধ ভাত খিচুড়ি কাঁচা কলা ইত্যাদি
- হাত ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ডায়রিয়া হলে সাবধানে থাকুন
মুখে শুকনোভাব,প্রস্রাব কমে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া এসব লক্ষণ নজরে রাখুন
- মুখে শুকনো ভাব প্রস্রাব কমে যাওয়া বা হলুদ হয়ে যাওয়া
- চোখ বসে যাওয়া
- দুর্বলতা মাথা ঘোরা
- শিশুর ক্ষেত্রে কাঁদলেও চোখে জল না থাকা
- দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জীবন চোখের সম্ভাবনা থাকে
- ওর স্যালাইন পান করানো
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর একগ্লাস করে ওর স্যালাইন দিন
- শিশুদের ক্ষেত্রে চামচে করে বারবার অল্প অল্প করে দিন
- ঘরের তৈরি লবণ চিনির স্যালাইন ব্যবহার করা যায়
- খিচুড়ি সাদা ভাত আলু কাঁচা কলা
- শিশুদের বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে
- ডাবের পানি ভাতের মার লেবু পানি
- পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে
- যদি শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে হয়
- বয়স্ক বা গর্ব ভর্তি নারীর ক্ষেত্রে
- বারবার পায়খানা হচ্ছে অমুক চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে
- প্রস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে
- শরীরে শক্তি ধরে রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
- অতিরিক্ত চলাফেরা বা কাজ না করাই ভালো
- প্রচণ্ড দুর্বলতা চলাফেরা করতে না পারা
- বারবার বমি হওয়া
- জ্ঞান হারানোর উপক্রম
- বাচ্চা খুব কাহিল হয়ে পড়েছে বা পানি খেতে চাচ্ছে না
- ডায়রিয়ার কারণে মুখে শুকনোভাব
- প্রস্রাব কমে যাওয়া ও চোখ বসে যাওয়ার মত লক্ষণ
- এই লক্ষণ গুলো ডি-হাইড্রেশনের বিপদজনক ইঙ্গিত
- সময়মতো ওরস্যালাইন তরল খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন
- অবহেলা নয় সচেতন হোন সুস্থ থাকুন
মাসুদা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url