ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় কি কি

ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত কনটেন্ট লিখার চেষ্টা করব যা আপনাদের উপকারে আসবে। ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা একটি সাধারণ কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বয়স্ক সবার ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে, বিশেষ করে যদি সময় মতো সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। চলুন জেনে নেই ডায়রিয়া হলে আমাদের কি কি করণীয়।

ডায়রিয়া-হলে- আমাদের-করণীয়- কি-কি

ডায়রিয়া একটি চিকিৎসাযোগ্য সমস্যা, তবে অবহেলা করলে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই ডায়রিয়া সহজেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। শিশু, গর্ভবতী নারী ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।আপনার সুস্থতাই আমাদের প্রাধান্য-ডায়রিয়া হলে ভয় নয়, সচেতনতা ও সঠিক করণীয়ই হতে পারে আপনার পরিত্রাণ।

পেজ সূচিপত্রঃ ডায়রিয়ার মতো ভয়ানক রোগের বিভিন্ন প্রতিকার বিশ্লেষন

                      ডায়রিয়া হলে করণীয় প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করুন

                      ডায়রিয়া হলে করণীয়- ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে বিপুল পরিমাণ তরল ও লবণ বের হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। এটি ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষদের জন্য ভয়াবহ হতে পারে। এটি পানি শূন্যতা প্রতিরোধে সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি হলো প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করা। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

                      ডায়রিয়া হলে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওর স্যালাইন পান করা কেন জরুরীঃ
                      পানি শূন্যতা রোধে-ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে তরল বের হয়ে পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে। ওর স্যালাইন শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইট পূরণ করে। লবণ ও গ্লুকোজ সরবরাহ-ওর স্যালাইন থাকা লবণ ও চিনি অন্ত্রে শোষণে সাহায্য করে, ফলে শরীর দ্রুত পূনরায় জলীয় ও খনিজ উপাদান ফিরে পায়।শরীরের শক্তি ধরে রাখে-বারবার পাতলা পায়খানার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ওর স্যালাইন পান করলে শরীর কিছুটা শক্তি পায়।বমি বা মাথা ঘোরা কমায়-পানি শূন্যতার কারণে যেসব লক্ষণ দেখা যায়( যেমন মাথা ঘোরার চোখ বসে যাওয়া) তা কমিয়ে আনে।সহজে ঘরে তৈরি করা যায়-ঘরে ওরস্যালাইন না থাকলে ঘরেই তৈরি করা যায় এক লিটার পানিতে ১চা চামচ লবণ ও ৮ চা চামচ চিনি মিশিয়ে।

                      ব্যবহার বিধিঃ
                      • ১ লিটার ঠান্ডা ফুটানো পানিতে একটি প্যাকেট মিশিয়ে নিন তৈরি করে নিন।
                      • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ২০০-২৫০ মিলি করে ওরস্যালাইন পান করুন।
                      • শিশুর ক্ষেত্রে ৫০-১০০ মিলি করে দেওয়া উচিত।
                      • একবার তৈরি স্যালাইন ১২ ঘন্টার মধ্যে শেষ করে ফেলতে হবে।

                      আরো পড়ুনঃ জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার


                      সতর্কতাঃ
                      • অতিরিক্ত ঘন বা পাতলা ওরস্যালাইন তৈরি করবেন না।
                      • অতিরিক্ত স্যালাইন পান করলে ওজন বেড়ে যেতে পারে বা পেটে অস্বস্তি হতে পারে।
                      • ডায়রিয়ার সঙ্গে যদি জ্বর, রক্ত মিশ্রিত পায়খানা  বা দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

                      হালকা সহজপাচ্য খাবার খান যেমনঃ খিচুড়ি, সিদ্ধ ভাত, আলু,কাঁচা কলা

                      ডায়রিয়া হলে আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বেরিয়ে যায়, ফলে দুর্বলত্‌ পানি শূন্যতা ও পুষ্টিহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। এই অবস্থায় হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে শরীর দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং পেটের উপর চাপ না পড়ে। নিচে খিচুড়ি, সিদ্ধ ভা্‌ সিদ্ধ আলু ও কাঁচা কলা এই সহজপাচ্য খাবার গুলো ডায়রিয়ার সময় কেন খাওয়া উচিত তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলোঃ
                      খিচুড়িঃ
                      • একটি হালকা ও সহজ সহজপাচ্য খাবার যা চাল ও ডাল দিয়ে তৈরি হয়।
                      • এটি সহজে হজম হয় এবং পেটের উপরে অতিরিক্ত চাপ ফেলে না।
                      • ডাল থেকে প্রোটিন ও চাল থেকে শক্তি পাওয়া যায়, যা শরীরের দুর্বলতা কাটাতে সাহায্য করে।

                      সিদ্ধ ভাতঃ
                      • পাতলা ভাত বা হালকা গরম ভাত ডায়রিয়ার সময় উপকারী।
                      • এটি সহজে হজম হয় এবং দেহের শক্তি যোগায়।
                      • ভাত থেকে কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়, যা শরীরের শক্তি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
                      • ভাতের মাড় পান করলেও শরীরে পানি ও মিনারেল পূরণ হয়।

                      সিদ্ধ আলুঃ
                      • আলুতে রয়েছে উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট যা শক্তি যোগায়।
                      • এটি সহজে হজম হয়এবং পেটের ভিতরের স্তরকে শান্ত রাখে। 
                      • আলুতে থাকা পটাশিয়াম ডায়রিয়ায় হারিয়ে যাওয়া ইলেকট্রোলাইট পূরণ করে।
                      • খাওয়ার সময় একটু লবণ দিয়ে খেলে আরো উপকার পাওয়া যায়।
                      কাঁচা কলাঃ 
                      • ডায়রিয়া কমাতে কার্যকর প্রাকৃতিক উপাদান।
                      • এতে থাকার ট্যানিন ও পেকটিন পেটের ঝিল্লিকে রক্ষা করে এবং পাতলা পায়খানা হওয়া রোধ করে।
                      • কলা সিদ্ধ করে খেতে হয়, যাতে হজম সহজ হয় এবং আঁশ জাতীয় উপাদান পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
                      • এটি শরীরের মিনারেল সরবরাহ করে এবং দুর্বলতা কাটাতে সহায়ক।

                      শরীরের শক্তি ও পুষ্টি ধরে রাখতে স্যালাইন ও ডাবের পানি একসঙ্গে চালিয়ে যান 

                      ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয়ঃ ডায়রিয়া হলে শরীরের শক্তি ওপুষ্টি ধরে রাখতে স্যালাইন ও ডাবের পানি একসাথে খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ-বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলোঃ
                      ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে আমাদের শরীর থেকে বিপুল পরিমাণ পানি,লবণ ও মিনারেল বের হয়ে যায়।এর ফলে পানিশুন্যতা,দূর্বলতা,মাথা ঘোরা, এমনকি মারাত্বক সমস্যা দেখা দিতে পারে।এই অবস্থায় শরীরের শক্তি ও পুষ্টি ধরে রাখতে ওরস্যালাইন ও ডাবের পানি একসাথে খাওয়া অত্যন্ত কার্যকরী।

                      ওরস্যালাইন এর উপকারিতাঃ
                      • ওরস্যালাইন শরীরে পানি ও ইলোকট্রোলাইট( যেমন সোডিয়াম পটাশিয়াম গ্লুকোজ) দ্রুত সরবরাহ করে
                      • এটি শরীরের পানি শূন্যতা রোধে সাহায্য করে
                      • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ১ গ্লাস করে খেলে শরীরের লবণের ঘাটতি পূরণ হয়
                      • স্যালাইন শরীরের রক্তচাপ ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং দুর্বলতা কমায়

                      ডাবের পানি এর উপকারিতাঃ

                      • ডাবের পানি একটি প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইট দ্রবণ যা পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও মিনারেল সমৃদ্ধ
                      • এটি শরীরের দ্রুত শক্তি যোগায় ও পানি শূন্যতা দূর করে
                      • ডায়রিয়ায় খনিজ পদার্থ হারিয়ে গেলে ডাবের পানি তা প্রাকৃতিকভাবে পূরণ করে
                      • এটি পেট ঠান্ডা রাখে ও হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে

                      একসাথে কেন খাওয়া দরকারঃ

                      • ডাবের পানি ও স্যালাইন উভয়ই শরীরকে আলাদা আলাদা উপকার দেয়
                      • ডাবের পানির প্রাকৃতিক মিনারেল ও স্যালাইনের পরিমিত লবণ ও গ্লুকোজ মিলিয়ে শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখে
                      • ডায়রিয়া চলাকালীন দিনে কয়েকবার ডাবের পানি এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়া শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের সাহায্য করে
                      • এতে করে এতে করে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও পানি শূন্যতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়

                      শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান,পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন

                      শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো শিশুর ডায়রিয়া হলে দ্রুত ও সঠিকভাবে যত্ন নেয়া খুব জরুরী বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া মারাত্মক হতে পারে কারণ এতে শরীর দূরত্ব পানি শূন্য হয়ে পড়ে নিচে শিশুর ডায়রিয়া হলে শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়ান এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো
                      বারবার দুধ খাওয়া কেন জরুরীঃ

                      • বুকের দুধ শিশুর জন্য সর্বোত্তম খাবার বিশেষ করে ডায়রিয়ার সময়
                      • এই সময় শিশুকে অতিরিক্ত দুধ বা বাইরের দুধ অতিরিক্ত দুধ খাওয়ানো উচিত
                      • বুকের দুধে রয়েছে এন্টিবডি যার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে
                      • পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করে
                      • সহজে হজম হয় এবং শিশুর পেটকে আরাম দেয়
                      • ডায়রিয়ার সময় শিশুর শরীরে যে পানির ঘাটতি হয় তা পূরণ করে
                      • বুকের দুধে ল্যাকটোফেরিন ও অন্যান্য উপাদান থাকে যা ডায়রিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে কাজ করে
                      • প্রতিবার পায়খানার পর শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে যদিও সেটা আগের চেয়ে বেশি হতে পারে

                      পরিচ্ছন্ন রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণঃ
                       
                      • ডায়রিয়ার প্রধান কারণ হলো ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী খাবার বা পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে।
                      • শিশুকে খাবার দেওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে
                      • পায়খানা পরিষ্কার করার পর হাত ধুতে হবে
                      • শিশুর প্রস্রাব পায়খানা পরিবর্তনের পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে
                      • ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে বুকের দুধ খাওয়াতে হবে
                       

                      পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন

                      ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয়-পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন টয়লেট ব্যবহার ও জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কারের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলোঃ ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল ও ব্যাকটেরিয়া নিঃসৃত হয়। এই ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস গুলো টয়লেট এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। টয়লেট ব্যবহারের পর যদি নিয়ম মেনে ভালোভাবে পরিস্কার না করা হয়, তাহলে ডায়রিয়ার জীবাণু সহজে পরিবারের অন্য সদস্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ডায়রিয়া হলে প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর পানি দিয়ে ভালোভাবে ফ্লাশ করা উচিত যাতে মল ও জীবাণু পুরোপুরি দূর হয়। নিয়মিত টয়লেটের প্যান, হ্যান্ডেল, ফ্ল্যাশ বোতাম ও দরজার হাতল জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়।

                      আরো পড়ুনঃ গ্যাষ্টিকের সমস্যা হলে আমাদের কি করা উচিত

                      সপ্তাহে অন্তত২-৩ বার ব্লিচ বা ক্লোরিনযুক্ত ডিসিনফেক্টেন্ট ব্যবহার করে টয়লেট পরিষ্কার করা উচিত। টয়লেট পরিষ্কারের সময় হাত ও মুখ ঢেকে রাখা উচিত যেন জীবাণু শরীরে প্রবেশ না করতে পারে।
                      টয়লেট ব্যবহার বা পরিষ্কারের পর সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া উচিত, যাতে সংক্রমণ না ছড়ায় পরিবারের কেউ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে চেষ্টা করুন তার জন্য আলাদা টয়লেট ব্যবস্থা করতে। টয়লেট ব্যবহার বা পরিষ্কারের পর সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত দেওয়া উচিত, যাতে সংক্রমণ না ছড়ায়। এর মেঝে কোন ও পাশে যেন পানি জমে না থাকে ।জীবাণু সেখানে জন্মাতে পারে। এই নিয়মগুলো মানলে ডায়রিয়ার সংক্রমণ থেকে পরিবারের অনেককে নিরাপদ রাখা সম্ভব। পরিচ্ছন্ন ও জীবানুনাশক ব্যবহার শুধু ডায়রিয়ার সময় নয়, সব সময় স্বাস্থ্যকর। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট নিচে দেওয়া হলোঃ

                      • ডায়রিয়ার সময় জীবাণুর ঝুঁকি বেড়ে যায়
                      • পরিচ্ছন্ন টয়লেট রোগ প্রতিরোধ করে
                      • প্রতিবার ব্যবহারের পর ফ্ল্যাশ করা জরুরি
                      • জীবাণুনাশক ব্যবহার করুন 
                      • গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার করুন পরিষ্কার করার সময়
                      • পরিষ্কারের পর হাত ধোয়া বাধ্যতামূলক
                      • শিশু বা অসুস্থ ব্যক্তি আলাদা টয়লেট ব্যবহার করুন
                      •  টয়লেটের আশপাশ শুকনো ও পরিষ্কার রাখুন
                      • ব্লিচ বা ডিসিনফেকটেন্ট ব্যবহার করা

                      সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে খাওয়ার আগে ও টয়লেটের ব্যবহারের পর

                      ডায়রিয়া হলে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ, যা সংক্রমণ রোধের সহায়তা করে। নিচে এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলোঃ
                      ডায়রিয়া হলে কেন সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবেঃ
                      ডায়রিয়া মূলত ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবের মাধ্যমে ছড়ায় এই জীবাণুগুলো আমাদের হাতের মাধ্যমে মুখে প্রবেশ করে শরীরের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ডায়রিয়া চলাকালীন পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।তাই সাবান দিয়ে হাত ধোয়া হলো সংক্রমণ প্রতিরোধের একটি সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
                      সাবান-দিয়ে-ভালোভাবে-হাত-ধুতে-হবে-খাওয়ার-আগে-ও-টয়লেটের-ব্যবহারের-পর

                      কখন অবশ্যই সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবেঃ

                      টয়লেট ব্যবহারের পরঃ
                      • ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির পরিচর্যার পর
                      • খাবার রান্না ও খাওয়ার আগে
                      • শিশুদের খাওয়ানোর আগে
                      • ডায়াপার পরিবর্তনের পর
                      • মুখ নাক বা চোখে হাত দেওয়ার আগে
                      • স্যালাইন বা ওষুধ তৈরীর আগে
                      কিভাবে সঠিকভাবে হাত ধুতে হবেঃ
                      • হাতকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিন
                      • ভালোভাবে সাবান মাখান-আঙ্গুলের ফাঁক, নখের নিচে, হাতের পেছনেও
                      • অন্তত ২০ সেকেন্ড ঘষে ধুতে থাকুন
                      • পরিষ্কার পানি দিয়ে সাবান ধুয়ে ফেলুন
                      • পরিষ্কার তোয়ালে বা বাতাসের শুকিয়ে ফেলুন
                      সাবান না থাকলে কি করবেনঃ
                      • সম্ভব হলে অ্যালকোহল মুক্ত হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করুন
                      • তবে ময়লা বা চর্বিযুক্ত হাতে স্যানিটাইজ এর কার্যকর নাও হতে পারে, সে ক্ষেত্রে পানি ও সাবানই শ্রেষ্ঠ উপায়
                      সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার উপকারিতাঃ
                      • জীবাণু ও ভাইরাস ধ্বংস হয় 
                      • নিজের ও অন্যদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়
                      • পরিবার ও শিশুদের নিরাপদ রাখা যায়
                      • ডায়রিয়ার বিস্তার কমানো যায়
                      ডায়রিয়া হলে নিয়মিত সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোঁয়া আপনার স্বাস্থ্য রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে এটি একটি সহজ কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস।

                      নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণ করুন

                      ডায়রিয়া হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়ার গুরুত্ব-বিস্তারিত বিবরণঃ 
                      ডায়রিয়া একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা হলেও অনেক সময় গুরুতর রুপ নিতে পারে। অনেকেই নিজের মতো করে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান, যা বিপদজনক হতে পারে। ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না খেয়ে সঠিকভাবে চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

                      নিজে-ওষুধ-না-খেয়ে-চিকিৎসকের-পরামর্শ-অনুযায়ী-ওষুধ-গ্রহণ-করুন

                      নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার ঝুঁকিঃ
                      • ভুল ওষুধ খাওয়া-নিজে ওষুধ খেলে রোগের ধরন অনুযায়ী সঠিক নাও হতে পারে
                      • ডোজের ভুল- বেশী বা কম খেলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে 
                      • অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক-প্রয়োজন ছাড়া এন্টিবায়োটিক খেলে শরীরে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয় ভবিষ্যতে বড় সমস্যা হয়
                      • আসল রূপ চিহ্নিত না হওয়া-ডায়রিয়ার পেছনে বড় কোন অসুখ (যেমন টাইফয়েড, আমাশয়,ফুড পয়জনিং)থাকতে পারে। নিজে ওষুধ খেলে তার ধরা নাও পড়তে পারে
                      চিকিৎসকের পরামর্শ কেন জরুরী চোখের পরামর্শ কেন জরুরিঃ
                      • রোগের ধরন অনুযায়ী পরীক্ষার পর ওষুধ দেওয়া হয়
                      •  ওষুধের সঠিক মাত্রা ও সময় নির্ধারণ করেন
                      • শিশু গর্ভবতী নারী বা বৃদ্ধদের জন্য আলাদা নির্দেশনা দেন
                      • প্রয়োজন হলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন
                      • অন্যান্য রূপ থাকলে সেটার দিকেও খেয়াল রাখেন 
                      চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও যা যা মানা উচিতঃ
                      • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওরস্যালাইন পান করুন
                      • সহজ পাঠ্য খাবার খান সিদ্ধ ভাত খিচুড়ি কাঁচা কলা ইত্যাদি
                      • হাত ধোয়া ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন
                      • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন ডায়রিয়া হলে সাবধানে থাকুন

                      মুখে শুকনোভাব,প্রস্রাব কমে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া এসব লক্ষণ নজরে রাখুন

                      ডায়রিয়া হলে মুখের শুকনো ভাব, প্রস্রাব কমে যাওয়া, চোখ বসে যাওয়া-করণীয় বিষয়ক বিস্তারিত বিবরণ-ডায়রিয়ার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ বের হয়ে যায় যার ফলে ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতা দেখা দেয় এরই লক্ষণগুলো হলোঃ
                      • মুখে শুকনো ভাব প্রস্রাব কমে যাওয়া বা হলুদ হয়ে যাওয়া
                      • চোখ বসে যাওয়া
                      • দুর্বলতা মাথা ঘোরা
                      • শিশুর ক্ষেত্রে কাঁদলেও চোখে জল না থাকা
                      • দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জীবন চোখের সম্ভাবনা থাকে
                      এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিক করণীয়ঃ
                      • ওর স্যালাইন পান করানো
                      • প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর একগ্লাস করে ওর স্যালাইন দিন
                      • শিশুদের ক্ষেত্রে চামচে করে বারবার অল্প অল্প করে দিন 
                      • ঘরের তৈরি লবণ চিনির স্যালাইন ব্যবহার করা যায়
                      খাবার খাওয়ান সহজপাচ খাবার খাওয়ানঃ
                      • খিচুড়ি সাদা ভাত আলু কাঁচা কলা
                      • শিশুদের বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হবে 
                      • ডাবের পানি ভাতের মার লেবু পানি
                      • পানির ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে
                      চিকিৎসকের শরণাপন্ন হনঃ
                      • যদি শিশুর বয়স পাঁচ বছরের নিচে হয়
                      • বয়স্ক বা গর্ব ভর্তি নারীর ক্ষেত্রে
                      • বারবার পায়খানা হচ্ছে অমুক চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে
                      • প্রস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে
                      • শরীরে শক্তি ধরে রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
                      • অতিরিক্ত চলাফেরা বা কাজ না করাই ভালো
                      কখন হাসপাতালে নিতে হবেঃ
                      • প্রচণ্ড দুর্বলতা চলাফেরা করতে না পারা
                      • বারবার বমি হওয়া
                      • জ্ঞান হারানোর উপক্রম
                      • বাচ্চা খুব কাহিল হয়ে পড়েছে বা পানি খেতে চাচ্ছে না
                      • ডায়রিয়ার কারণে মুখে শুকনোভাব
                      • প্রস্রাব কমে যাওয়া ও চোখ বসে যাওয়ার মত লক্ষণ
                      • এই লক্ষণ গুলো ডি-হাইড্রেশনের বিপদজনক ইঙ্গিত
                      • সময়মতো ওরস্যালাইন তরল খাবার ও চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন
                      • অবহেলা নয় সচেতন হোন সুস্থ থাকুন

                      ঘরে স্যালাইন তৈরি করতে পারেন ১ লিটার পানিতে ১ চা-চামচ লবণ ও ৮ চা-চামচ চিনি

                      ডায়রিয়া হলে ঘরে স্যালাইন তৈরীর করার নিয়ম-বিস্তারিত বিবরণ- ডায়রিয়া হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ এর পানি ও লবণ বের হয়ে যায়, ডিহাইড্রেশন বা পানি শূন্যতার কারন হয়। এই অবস্থায় দ্রুত শরীরে তরল ও লবণের ঘাটতি পূরণ করা জরুরি। ওরস্যালাইনের এই ঘাটতি পূরণে সবচেয়ে কার্যকর কিন্তু ঘরে রেডিমেড ওরস্যালাইন না থাকলে চিন্তা নেই, ঘরে তৈরি স্যালাইন হতে পারে জীবন রক্ষাকারী।


                      কিভাবে ঘরে স্যালাইন তৈরি করবেনঃ
                      ঘরে স্যালাইন তৈরি করতে যা লাগবে-১ লিটার ফুটানো ও ঠান্ডা করা পরিষ্কার পানি,এক চা চামচ লবণ, ৮ চা চামচ চিনি।একটি পরিষ্কার পাত্র নিন। এক লিটার পানি ঢালুন তাতে এক চা চামচ লবণ ও আর চা চামচ চিনি নিন। ভালোভাবে নাড়ুন যতক্ষণ না পুরোপুরি গলে যায়। লবণ বা চিনি কম বা বেশি হলে স্যালাইন ক্ষতিকর হতে পারে। খুব বেশি ঘন বা পাতলা হলে বমি বা পানি শূন্যতা বাড়তে পারে। প্রতিবার তৈরির সময় সঠিক পরিমাপ অনুসরণ করুন। শিশুদের জন্য ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। পাতলা পায়খানা বারবার হলে মুখ শুকিয়ে গেলে, প্রস্রাব কমে গেল্‌ দুর্বলতা ও মাথা ঘোরা অনুভব করলে, ওর স্যালাইন পাওয়া না গেলে দ্রুত বিকল্প হিসেবে ঘরে তৈরি করে নিন।  

                      লেখকের শেষ কথা মন্তব্য ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় কি কি এই সম্পর্কে

                      ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় কি কি-উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনার ভিত্তিতে একথা বলা যায় যে ডায়রিয়ার সমস্ত সমাধান বলে দেওয়া হয়েছে। এটি সহজ নিরাপদ ও কার্যকর ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি। ডায়রিয়া হলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে ও পানি শূন্যতায় ঝুঁকি থাকে এ সময় স্যালাইন ও ডাবের পানি একসাথে খেলে শরীর প্রয়োজনীয় পানি লবণ ও মিনারেল ফিরে পায় এবং দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর ওর স্যালাইন পান করাটা ডায়রিয়া মোকাবেলার একটি জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা। এটি শুধু পানি শূন্যতা প্রতিরোধ করে না বরং শরীরকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে ও সাহায্য করে তাই ডায়রিয়ার সময় অবহেলা করা একদমই উচিত নয়। সাথে সাথে উল্লেখিত খাবার গুলোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।

                      প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ ধৈর্য ধরে আমার আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যদি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে আপনার প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আমার কাছে পুরো আর্টিকেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে ডায়রিয়া হলে আমাদের করণীয় প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ওর স্যালাইন বাজারের টা না থাকলে, ঘরে তৈরি করে দ্রুত খেতে হবে। যদি আর্টিকেলটি পড়ে ভালো লাগে, তাহলে এই ওয়েবসাইটটি মাঝে মাঝে ভিজিট করবেন। আশা করি হতাশ হবেন না বরং উপকৃত হবেন।

                      এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

                      পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
                      এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
                      মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

                      মাসুদা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

                      comment url