ওজন কমাতে আমরা কি কি খাবার খেতে পারি
ওজন কমানো (Weight Loss) একটি স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি শুধু শরীরের আকৃতি পরিবর্তন করে না, বরং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার উপর ও গভীর প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত ওজন হৃদরোগ, উচ্চচাপ ও স্ট্রোকের বাড়ায্ ওজন কমালে এই ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়।
ওজন কমানোর শুধু একটি সৌন্দর্য বিষয় নয়, এটি জীবনের মান উন্নয়নের একটি কার্যকর উপায়। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ইতিবাচক জীবনধারার মাধ্যমে এটি সম্ভব। ওজন কমাতে চাইলে আমাদের খাদ্যাভ্যাসে কিছুটা কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা জরুরি
পেজ সুচীপত্রঃ উজ্জ্বল সহায়ক খাবার ও বিস্তারিত তথ্য
- সবুজ শাকসবজি ফলমূল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
- পূর্ণ শস্য গ্রিন টি বা লেবু পান, পানীয় জল পান করা
- পরিমিত ক্যালোরি গ্রহণ করুন ও ফাইবার যুক্ত খাবার খান
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও চিনি মিষ্টি এড়িয়ে চলুন
- ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন এবং নির্দিষ্ট কিছু ফলমূল খান
- হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে ও দীর্ঘায়ু বাড়ায়
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে জয়েন্ট ও হাড়ের চাপ কমায়
- শারীরিক ফিটনেস ও শক্তি বাড়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
- লেখকের শেষকথা, মন্তব্য ওজন কমানোর বিভিন্ন কলাকৌশল
সবুজ শাকসবজি ফলমূল ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল ওজন কমাতে সহায়ক.।যেমন পালং শাক, লাল শাক, মূলা শাক,
ব্রকল্ লেটুস পাতা- ক্যালরি কম, কিন্তু ফাইবার ভিটামিন ও খনিজে ভরপুর হজমে
সাহায্য করে।দীর্ঘক্ষন পেট ভরা রাখে, শাক সবজি ও ফলমূল সাধারণত খুব কম ক্যালরি
প্রদান করে, কিন্তু ফাইবারে ভরপুর থাকে। তাই কম খিদে পায়। প্রাকৃতিক অ্যান্টিস
অক্সিডেন্ট ও মিনারেল সমৃদ্ধ এই খাবারগুলো শরীর ডিটক্স করে, হজমে সহায়তা
করে এবং ভ্যাট বার্নের সহায়তা করে। ফলে শরীর হাইড্রেট থাকে এবং হজমের প্রক্রিয়া
সঠিকভাবে চলে।
ওজন কমাতে উপকারী সবুজ শাকসবজির তালিকা ও উপকারিতাঃ
শাক সবজির নাম -- উপকারিতা
- পালং শাক আয়রন ও ফাইবারে ভরপুর, হজমে সাহায্য করে
- লাল শাক এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, কোলেস্টেরল কমায়
- ঢেঁড়শ ফাইবার ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, হজম বাড়ায়
- বাধাকপি চর্বি কমায়, ফ্যাট বার্ন করতে সাহায্য করে
- করলা ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে রাখে, ডায়াবেটিস ও ওজন কমায়
- ঝিংগ/চিচিংগে পানির পরিমাণ বেশি, কম ক্যালরিযুক্ত
ওজন কমাতে উপকারী ফলমূলের তালিকা ও উপকারিতা
- ফলের নাম উপকারিতা
- আপেল ফাইবারে ভরপুর, ক্ষুধা কমায়
- কমলা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, ফ্যাট বাড়নে সহায়তা করে
- কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ,শরীর শক্তি পায় ও ক্ষুধা কমায়
- পেয়ারা কম ক্যালোরি, বেশি ফাইবার
- তরমুজ পানি ও ফাইবারের সমৃদ্ধ, পেট ভরে রাখে
- পেঁপে হজম বাড়ায়, চর্বি কমাতে সহায়তা করে
পূর্ণ শস্য গ্রিন টি বা লেবু পান, পানীয় জল পান করা
ওজন কমাতে পূর্ণ শস্য, গ্রিন টি, লেবু পান ও পর্যাপ্ত পানি পান -এগুলো অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিচে প্রত্যেকটি বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা করা
হলোঃ
পূর্ণ শস্য (Whole Grains)
পূর্ণশ্য হলো এমন শস্য যা প্রাকৃতিক রূপে থাকে এবং এর মধ্যে ব্রান( ছোলার খোসা),
জার্ম ও এন্ডোস্পার্ম থাকে।যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস,বার্লি, কুইনোয়া। ওজন কমাতে
সাহায্য করে, যেমন-পূর্ণ শস্য অনেক বেশি আশঁযুক্ত,যা দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি
রাখে।রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে,ফলে ইনসুলিন বৃদ্ধি কম হয়, যা ফ্যাট
জমার হার কমায়। হজম ধীরে হয়-এতে ক্ষুধা কম লাগে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার
প্রবণতা কমে।কিভাবে খাওয়া উচিতঃ
- সকালে ওটমিল বা ব্রাউন ব্রেড
- দুপুরে ব্রাউন রাইস বা কুইনোয়া
- রাতে লাইট ডিনারের সঙ্গে বার্লি বা ওটস
গ্রিন টি(Green Tea)
গ্রিন টি একটি প্রাকৃতিক এন্টি-অক্সিডেন্ট এ ভরপুর পানীয় যা কেফেইনও ক্যাটেইন
উপাদান ধারণ করে। ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করে-মেটাবলিজম বাড়ায়। গ্রিন টি
শরীরের ক্যালরি পুড়ানোর হার বাড়ায়, ফ্যাট অক্সিটেশন করে শরীরের জমা চর্বিকে
শক্তিতে পরিণত করে,জিটিক্সিফিকেশন করে শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করে দেয়।
কিভাবে খাওয়া উচিতঃ
দিনে ২-৩ কাপ পান করুন।
সকালে খালি পেটে এবং দুপুরে খাবারের পরে খাওয়া উপকারী।
লেবু পান (Lemon Water)
লেবুর রস এ রয়েছে ভিটামিন সি এবং এটি অক্সিডেন্ট যা শরীর পরিষ্কার করেও হজমে
সাহায্য করে ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করে-ডিটক্স ইফেক্ট-শরীর থেকে টক্সিন বের
করে দেয়। হজমে সহায়তা করে-লিপ পান হজম শক্তি বাড়ায় এবং কুষ্ঠ কাঠিন্য দূর
করে। ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে-লেবু পান করলে বারবার খিদে পাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
কিভাবে খাওয়া উচিতঃ
সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে এক টুকরো লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন
চাইলে সামান্য মধু মেশানো যেতে পারে
পর্যাপ্ত পানি পান
মানে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কাজ ঠিকমত চালাতে সাহায্য করে এবং দেহের তাপমাত্রা
নিয়ন্ত্রণে রাখে ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করে-অতিরিক্ত খিদে কমায় অনেক সময়
আমরা পানি না খেয়ে ক্ষুধা অনুভব করি। মেটাবলিজম বাড়ায়-ঠান্ডা পানি খেলে শরীর
বেশি ক্যালরি পোড়ায়। বর্জ্য পদার্থ দূর করে-প্রস্রাবক ঘামের মাধ্যমে চর্বি
ও টক্সিন বের করে দেয়। কিভাবে পান করবেনঃ
দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করবেন।
খাবারের আগে এক গ্লাস পানি পান করলে ক্ষুধা কমে।
পরিমিত ক্যালোরি গ্রহণ করুন ও ফাইবার যুক্ত খাবার খান
ওজন কমাতে পরিমিত ক্যালোরি গ্রহণ ও ফাইবার যুক্ত খাবার অত্যন্ত কার্যকর ও
বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত পদ্ধতি নিচে এই দুটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা
হলো
পরিমিত ক্যালোরি গ্রহণ: শরীরের চাহিদা তুলনায় অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করলে সে
অতিরিক্ত ক্যালোরি ফ্যাট হিসেবে জমে. তাই ওজন কমাতে হলে প্রতিদিন যতটুকু ক্যালরি
প্রয়োজন, তার চেয়ে কম ক্যালোরি গ্রহণ করতে হয়. ওজন কমাতে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণের
উপকারিতা:
- শরীর জমা চর্বি ভাঙতে বাধ্য করে ফলে ওজন কমে
- ইনসুলিন ও রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে
- হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস ঝুকি কমায়
কিভাবে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করবেন:
- ভাজাপোড়া, ফাস্টফু্ মিষ্টি, কোমল পানীয় কম খাবেন
- ঘরোয়া রান্না সেদ্ধ বা গ্রিল করা খাবার খান
- খাবারের পরিমাণ মেপে খান-"খিদে মিটলেই থেমে যান"
- উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে কম ক্যালরিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন
খাইবারযুক্ত খাবারঃ
সাইবার বা আঁশ হচ্ছে এক এমন এক ধরনের উপাদান যা হজম হয় না কিন্তু হজমের
প্রক্রিয়ায় সহায়ক হয়। এটি মূলত উদ্ভিজ্জ খাবারে পাওয়া যায়, ওজন কমাতে
ফাইবার কিভাবে সাহায্য করেঃ
- পেট ভরা রাখে বেশি সময়ঃ ফাইবার ধীরে ধীরে হজম হয় ফলে খুদা কম লাগে
- খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমেঃ বারবার খাওয়ার প্রয়োজন হয় না
- রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করেঃ হঠাৎ ক্ষুধা লাগার প্রবণতা কমে যায়
- হজম কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করুন ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন
সঠিক খাদ্যাভ্যাস হলো এমন একটি খাদ্য পরিকল্পনা যেখানে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী
পরিমিত পুষ্টি ও ক্যালোরি গ্রহণ করা হয় এবং অপ্রয়োজনীয়, তেল মশলাযুক্ত বা
উচ্চচিনি ও ফ্যাট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা হয়। কমাতে কিভাবে সঠিক খাদ্যাভ্যাস
সাহায্য করেঃ
- শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমতে দেয় না
- হজম ভালো হয় এবং চর্বি কম জমা কমে
- পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে বলে অতিরিক্ত খাওয়া কমে
- শরীরের শক্তি ভারসাম্য বজায় থাকে
সঠিক খাদ্যাভাসে যা করণীয়ঃ
- নিয়ম নিয়মিত সময় মেনে খাবার খান( দিনে ৩-৫ বার)
- সবজি, ফলমূ্ পূর্ণ শস্য, ডাল, দুধ বেশি খান
- তেল মশলাযুক্ত খাবা্ ফাস্টফুট ও মিষ্টি কম খান
- খাবারের লবণ ও চিনি কম ব্যবহার করুন
- প্রতিদিন প্রচুর পানি পান করুন( ৮ থেকে ১০ গ্লাস)
নিয়মিত ব্যায়ামঃ
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ক্যালোরি পোড়াতে সাহায্য করে।
এটি শরীরকে ফিট রাখে। ওজন কমাতে ব্যায়ামের উপকারিতাঃ
- চর্বি পোড়ায় ও মাংসপেশী তৈরি করে
- মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে
- মানসিক চাপ কমায়, ঘুম ভালো হয়
- রক্তচাপ সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
পর্যাপ্ত পানি পান করুন ও চিনি মিষ্টি এড়িয়ে চলুন
কমাতে পর্যাপ্ত পানি পান ও চিনি ও মিষ্টি এড়িয়ে চলা অত্যন্ত কার্যকর দুটি
অভ্যাস নিচে এই দুটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো। পর্যাপ্ত পানি পান
ওজন কমাতে কিভাবে সাহায্য করেঃ
ক্ষুধা কমায়ঃ অনেক সময় শরীর পিপাসা আর ক্ষুধাকে গুলিয়ে ফেলে। পর্যাপ্ত পানি
পান করলে অপ্রয়োজনীয় খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
শরীরের বিপাকক্রিয়া বাড়ায়ঃ ঠান্ডা পানি পান করলে শরীর উষ্ণ করতে ক্যালরি ব্যয়
করে, যা বিপাক ক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
ডিটক্সিফিকেশনঃ শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়,যা হজম ভালো করতে সাহায্য
করে এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
পেট ভরাট রাখেঃ খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খেলে পেট কিছুটা ভরে যায়, পরে
অতিরিক্ত খাওয়া কমে যায়।
চিনি পানীয়র বিকল্পঃ সফট ড্রিংকস বা মিষ্টি পানীয়ের পরিবর্তে শুধু পানি পান করলে
প্রচুর অতিরিক্ত ক্যালরি বাঁচে।
ওজন কমাতে করণীয়ঃ
- অন্তত৮-১০ পানি পান করুন
- চা বা কফিতে চিনি না দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন
- সফট ড্রিংকস, বোতলজাত জু্স, ক্যান্ডি, কেক, বিস্কুট এড়িয়ে চলুন
- পানির সাথে লেবুর রস যোগ করে ডিটক্স পানীয় বানাতে পারেন
- বাড়িতে ফল খাওয়ার সময়ও বাড়তি চিনি না যোগ করে খাবার অভ্যাস করুন
ফাস্টফুড, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন এবং নির্দিষ্ট কিছু ফলমূল খান
ওজন কমাতে চাইলে ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড পেরিয়ে চলা এবং নির্দিষ্ট ফলমূল খাওয়া
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড কেন এড়িয়ে চলা জরুরি:জাম ফুড যেমন বার্গার পিজ্জা খাবার ইত্যাদি ওজন বাড়ানোর প্রধান কারণ গুলোর
মধ্যে অন্যতম।
ক্ষতিকর প্রভাব অতিরিক্ত ক্যালরি ও চর্বি থাকেঃ এই খাবারগুলোতে উচ্চ মাত্রায়
সেচুরেটেড ভ্যাট ও ক্যালোরি থাকে যার শরীরে চর্বি জমায়।
খাইবার কমঃ ফাস্টফুডে ফাইবার প্রায় থাকেই না হলে হজমে সমস্যা হয় এবং ক্ষুধা
দ্রুত ফিরে আসে
আসক্তি তৈরি করেঃ অতিরিক্ত লবণ চিনি ও ফ্যাট থাকার কারণে এই খাবারগুলোতে আসক্তি
তৈরি হয়।
ঝুঁরোগের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে হৃদরোগ ডায়াবেটিস ও উচ্চ
রক্তচাপ বেড়ে যায়।
নির্দিষ্ট ফলমুল যা ওজন যা ওজন কমাতে সহায়কঃ
ফলমূল হচ্ছে প্রাকৃতিক খাবার ,যেগুলোতে ফাইবার,পানি ও ভিটামিন থাকে কিন্তু
ক্যালরি কম ।নিচে ওজন কমাতে সহায়ক কিছু ফলের নাম ও বিবরণ দেওয়া হলোঃ
আপেলঃফাইবার ওএন্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, ক্ষুধা কমায়,চিবিয়ে খেতে হয় বলে পেট ভরাট
অনুভূত হয়।
লেবুঃভিটামিন সি সমৃদ্ধ,পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ডিটক্স করে এবং চর্বি গলাতে
সাহায্য করে ।
বেদানা/আনার ঃএন্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবারে সমৃদ্ধ,হজমে সাহায্য করে এবং
ইনসুলিন নিয়ন্ত্রনে রাখে ।
পেঁপেঃ হজমে সহায়ক এনজাইম থাকে,পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
কলাঃসকালের নাস্তায় খেলে পেট ভরা থাকে ,তবে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না ।
কমলা/ম্যান্ডারিনঃপ্রচুর পানি ও ভিটামিন সি থাকে,কম ক্যালরি দিয়ে দীর্ঘক্ষণ পেট
ভরা থাকে।
বেরি জাতীয় ফল ঃ ক্যালরি কম, কিন্তু এন্টিঅক্সিডেন্ট বেশি।
হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে ও দীর্ঘায়ু বাড়ায়
হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো এবং দীঘায়ু বাড়াতে ওজন কমানো খুবি গুরুত্বপূর্ণ।এর জন্য
কিছু বিষয় রয়েছে যা জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্ত্ন এনে আমরা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং দীর্ঘায়ু বাড়াতে সহায়তা করতে পারি।
সঠিক খাদ্যাভ্যাসঃওজন কমাতে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস
গুরুত্বপূর্ণ।কিছু প্রস্তাবিত খাদ্যঃ
সবুজ শাকসবজি ও ফলমূলঃ এগুলো ফাইবার এবং ভিটামিনে পূর্ণ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
সাহায্য করে।
পূর্ণ শস্যঃসাদা চিনি এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এড়িয়ে পুর্ণ শস্য
যেমন(ওট্মিল,বাদামি চাল,গম) খাওয়ার মাধ্যমে কোলাস্টোরেল নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
স্বাস্থ্যকর চর্বিঃঅলিভ ওয়েল,এভোকাডো এবং মাছ থেকে স্বাস্থ্যকর চর্বি হার্টের
জন্য উপকারি।
কম সোডিয়ামঃ উচ্চ সোদীয়ামের খাবার (যমন ফাস্ট ফুড,সংরক্ষিত খাবার) হৃদরোগের ঝুঁকি
বাড়ায়, তাই এসব এড়িয়ে চলুন।
নিয়মিত ব্যায়ামঃকার্ডিও ব্যায়াম -হাঁটা,দৌড়ানো,সাইক্লিং,সাঁতার কাটা এগুলো করার
মাধ্যমে হৃদপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখে।ওজন কমাতে সহায়তা করে।শক্তি বৃদ্ধির
ব্যায়াম-পুশ আপ,সিট আপ,ওয়েট ট্রেনিংও সাহায্য করে।পর্যাপ্ত পানি পান,পর্যাপ্ত
ঘুম,স্ট্রেস কমানো, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ,সিগারেট ও মদ্যপান পরিহার করলে
হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে জয়েন্ট ও হাড়ের চাপ কমায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন,জয়েন্ট ও হাড়ের উপর চাপ কমানোর মাধ্যমে কিভাবে
স্বাস্থ্য উপকার পাওয়া যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণ ও জয়েন্ট-হাড়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।অতিরিক্ত ওজন,বিশেষ
করে পেটের চর্বি ,টাইপ ২ ডায়াবেটিসের প্রধান কারন কারণগুলোর একটি। ওজন কমালে শরীর
ইনসুলিনকে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারে,ফলে রক্তে গ্লোকোজের মাত্রা
কমে।গবেষণায় দেখা গেছে ,শরীরের মোট ওজনের মাত্র ৫-১০% কমলেও টাইপ ২ ডায়াবেটিস
নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেক সহজ হয়।নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ
ডায়াবেটিসের ওষুধের প্রয়োজন কমিয়ে আনতে পারে।
জয়েন্ট ও হাড়ের উপর চাপ কমানো ঃঅতিরিক্ত ওজন হাঁটু,কোম্রর,মেরুদন্ড ও
অন্যান্য জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ সৃস্টি করে।এই অতিরিক্ত চাপের ফলে
অস্টিওআর্থ্রাইটিস,জয়েন্টে ব্যথা ও চলাফেরায় অসুবিধা দেখা যায়।ওজন কমালে প্রতি ১
কেজি ওজন কমলে হাঁটুর উপর প্রায় ৪ কেজি চাপ কমে -যা দীর্ঘমেয়াদে জয়েন্ট ব্যথা ও
ক্ষয় রোধে সহায়ক।ওজন কমানোর মাধ্যমে উপকারঃরক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ-ইনসুলিনের
কার্যকরি।রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল কমে-হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় ।জয়েন্টের চাপ কমে যায়
-হাঁটাচলা সহজ হয়
কিভাবে ওজন কমানো যাবেঃসুষম খাদ্য গ্রহণ-শাক সবজি ,ফলমূল,পূর্ণ শস্য,কম
চর্বিযুক্ত প্রোটিন খান।
প্রতিদিন হাঁটা /ব্যায়াম-দিনে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন।চিনি
ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন-সফট ড্রিকংস, মিষ্টি,ফাস্ট ফুড বাদ দিন।পর্যাপ্ত
পানি পান করুন-পানি রক্ত পরিশোধনে সহায়তা করে ও ক্ষুধা রাখে।নিয়মিত ঘুম-পর্যাপ্ত
ঘুম ঘুম হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
শারীরিক ফিটনেস ও শক্তি বাড়ায় মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়
নিশ্চিতভাবে- শারিরীক ফিটনেস ও শক্তি; বাড়ানো এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করার
ক্ষেত্রে ওজন কমানো একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।নিচে এই বিষয়গুলোর
বিস্তারিতভাবে বাংলা ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলোঃওজন কমানো শারিরীক ফিটনেস ও শক্তি; বাড়ানো এবং মানসিক স্বাস্থ্য এর সম্পর্ক-শারিরীক ফিটনেস
ও শক্তি বাড়ায়,ব্যায়্যামের মাধ্যমে ক্যালরি খরচ হয় ফলে ওজন কমে।ওজন কমলে হাঁটা
,দৌড়ানো ,সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠা সহজ হয়।পেশী ও হাড়ের গঠন মজবুত হয়।নিয়মিত
ব্যায়্যামে স্ট্যামিনা বা সহনশক্তি বৃদ্ধি পায় ,যা দৈনন্দিন কাজে গতি আনে।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ ব্যায়াম ও ওজন কমানো এন্ডোরফিন (ভাল লাগার হরমোন)
নিঃসরণ করে,যা মানসিক চাপ কমায় ।শরীর স্লিম ও ফিট থাকলে আত্মবিশ্বাস
বাড়ে,নেগেটিভ চিন্তা কমে যায়।ওজন কমিয়ে ঘুমের মান উন্নত হয় ,যা মানসিক প্রশান্তি
আনে।উচ্চ রক্তচাপ,ডায়াবেটিস ও উদ্বেগ কমে।ওজন কমানো হরমোনের ভারসাম্য ঠিক
রাখে,ফলে মুড ভালো থাকে।মাথাব্যথা,অবসাদ ও চিন্তাভাবনা কমে যায়।স্বাস্থ্য ভাল
থাকলে ,কাজে মনোযোগী হওয়া যায়।পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় উপভোগ করা
সহজ হয়।
লেখকের শেষকথা, মন্তব্য ওজন কমানোর বিভিন্ন কলাকৌশল
ওজন কমানোর বিভিন্ন বিষিয় নিয়ে আলোচনা করা হলো।ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন
করে।ওজন কমাতে চাইলে আমাদের প্রতিটি বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০
মিনিট হাঁটতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে।প্রক্রিয়াজাত ও চর্বিজাত খাবার এড়িয়ে চলতে
হবে।পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুম নিশ্চিত করা।মেডিটেশন বা ইয়োগা করা মানসিক চাপ কমাতে
সাহায্য করে।ওজন কমানো শুধু চেহারার পরিবর্তন নয়-এটি শরীর ও মনের জন্য একটি
পূর্ণাঙ্গ উন্নতির পথ।শারিরীক ফিটনেস,শক্তি আর মানসিক প্রশান্তি-সব একসাথে উন্নত
করে।
প্রিয় পাঠক ,অনেক ধন্যবাদ এতক্ষণ ধৈর্য্য ধরে সম্পূর্ন আর্টকেল টি পড়ার জন্য
।মুলতঃ ওজন কমানোর জন্য যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো, সেসব বিষয় গুলোর উপর
বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।আমার মতে ,খাবার ও ব্যায়াম এর উপর বিশেষ নজর দিতে
হবে।আপনার যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে যদি ভালো লাগে ,তাহলে আপনার প্রিয়জন বা
বন্ধুবান্ধবের সাথে শেয়ার করে দিবেন।এই আর্টকেল টা যদি ভালো লেগে থাকে, তাহলে এই
ওয়েবসাইট টা মাঝে মাঝে ভিজিট করবেন।
মাসুদা আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url